সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে বর্তমান প্রধান বিচারপতি যা বলেছেন

সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে বর্তমান প্রধান বিচারপতি যা বলেছেন, আর যা বলেননিবাংলাদেশীদের একটা অভ্যাস হল কেউ মারা গেলে তার সব দোষ কুকর্ম গুলো ভুলে, গুন তুলে ধরার প্রতিযোগিতা চলে। আর ফেসবুকে পত্রিকায় আহাজারি, আমিন, ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নইলাহি রাজিউন লেখার প্রতিযোগিতা চলে।বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে আজকের একটি শিরোনাম, “সাহাবুদ্দীন আহমদ বেঁচে থাকবেন তার বিচারিক সিদ্ধান্তে: প্রধান বিচারপতি।”প্রধান বিচারপতি আরও বলেছেন, “এই জাতি, পার্টিকুলারলি যারা বিচারাঙ্গনে চলাফেরা করেন, তারা জানেন সাহাবুদ্দীন সাহেবের কী অবদান এই বিচারাঙ্গনে। তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন তার বিভিন্ন জাজমেন্টের জন্য।উনার ঐতিহাসিক জাজমেন্ট অষ্টম সংশোধনীর জাজমেন্ট। তা ছাড়া কখন স্যুট মেইনটেনেবল (মামলা পরিচালনার যোগ্য) হবে আর কখন স্যুট মেইনটেনেবল হবে না, থার্টি নাইন ডিএলআর অ্যাপিলেট ডিভিশন পেইজ-৪৬ এর জাজমেন্ট, এই জাতি পার্টিকুলারলি বিচারাঙ্গনে সবাই সারাজীবন মনে রাখবে।”বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী যা বলেননি তা হলঃ এরশাদের ক্ষমতা কালীন সময়ে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল চেয়ে একটি রিট হয়েছিল, এবং সেই আদালতের বিচারক বিব্রত বোধ করেছিল। এই মামলা পরবর্তীতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের বেঞ্চ নিষ্পত্তি করেছিল। তিনি সেই সময়ে রায় দিয়েছিলেন যে এটা একটা মীমাংসিত বিষয়, অতএব এটা বাতিল করা যাবে না বা এ নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠতে পারে না। অথচ তৎকালীন সময়ে আইনবিদরা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, এই আইন সংবিধানের মৌলিক আইনের পরিপন্থী। অতএব এটা কোন অবস্থাতেই সংবিধানে বৈধভাবে থাকতে পারে না। সংবিধানকে সমুন্নত রাখে উচ্চ আদালত। এক্ষেত্রে সাহাবুদ্দিন আহমেদ হয়তো নিরপেক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি কী সংবিধানকে সমুন্নত রাখতে ন্যায় বিচার করেছিলেন, ঐতিহাসিক বা সাহসী কোন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? অবশ্যই না। কিন্তু সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক নিরপেক্ষ কিনা জানিনা তবে তিনি ন্যায় ও সাহসী বিচার করে সংবিধানকে সমুন্নত রেখে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তিনি সংবিধানের মৌলিক আইনের পরিপন্থী সপ্তম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেন। জিয়ার ও এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণসহ সকল সামরিক আইনকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। সাহাবুদ্দিন আহমদ নিরপেক্ষ তো দূরে থাক তিনি ছিলেন সুবিধাবাদী একজন মানুষ। একসময় তিনি গোপালগঞ্জের এস ডি ও ছিলেন তখন তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখেছেন। আবার মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের চাকরি করেছেন। মুক্তিযুদ্ধতো করেননি এমনকি চাকরি ছেড়ে দিয়ে একটা প্রতিবাদ করেননি। মওদুদ আহমদ পদত্যাগ করার পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করেছেন। তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি মওদুদ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হতে পারতেন না। কারণ এরশাদের জায়গায় মওদুদ চলে আসতো সাংবিধানিকভাবে। যার কারণে মওদুদ পদত্যাগ করা পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। তিনি শর্ত দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে তার স্বপদে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করতে হবে। একজন মানুষ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর সাধারণত তারচেয়ে নিম্ন পদে দায়িত্ব পালনে ফিরে যান না। কিন্তু তিনি তা করেছেন শুধুমাত্র তিনি সুবিধাবাদী ছিলেন বলে। তিনি রাষ্ট্রপতির অবসরের সুবিধা ও প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসরের সব সুবিধা খেয়েছেন।সাহাবুদ্দিন আহমেদ যে ইনডেমনিটি আইনকে মীমাংসিত বিষয় বলেছিলেন তার রায়ে। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস তিনি রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে সেই অধ্যাদেশ বাতিল হয়েছে। সেই আইনে তিনি স্বাক্ষরও করেছেন। সঙ্গত কারণেই অনেকে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সাহাবুদ্দিন আহমেদকে রাষ্ট্রপতি করার সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেন। আজকে একটা জিনিস অনুধাবন করছি কেন প্রধানমন্ত্রী এই কাজটা করেছিলেন, সাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি বানিয়ে তার সেই পক্ষপাত দুষ্ট রায়কে বাতিল করে তাকে দিয়ে রাষ্ট্রপতি হিসাবে স্বাক্ষর করানোর অভিপ্রায়ে। প্রধানমন্ত্রী সে ইচ্ছা পূরন করে তাকে শিক্ষাটা দিয়েছিলেন। তবে উচিত ছিল এরপর সাহাবুদ্দিনকে অভিশংসন করা।২০০১ সালে বি এন পি জামাত জোট ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জার্মান শাখার তৎকালীন সভাপতি মোঃ শাহাবুদ্দিন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাকে তাঁর লন্ডনের বাসায় টেলিফোন করেছিলেন। তিনি তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন আপা কেন আওয়ামী লীগের এত যোগ্য নেতা থাকতে তথাকথিত নিরপেক্ষ কিন্তু প্রকৃত অর্থে শঠ সুবিধাবাদি এই লোকটিকে রাষ্ট্রপতি করেছিলেন আপনারা? আমি জানিনা বর্তমান প্রধান বিচারপতি তার বক্তব্য দেয়ার মধ্য দিয়ে দেশবাসীর কাছে কি বার্তা পাঠাচ্ছেন। একজন প্রধান বিচারপতি আরেকজন সাবেক প্রধান বিচারপতির নামাজে জানাজায় উপস্থিত থেকে এটা কী করতে পারেন বা করা উচিত? যেখানে মৃতব্যাক্তিটির কর্ম নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। মমতাজুল ফেরদৌস জোয়ার্দারতথ্য ও গবেষণা সম্পাদকঅল ইউরোপিয়ান বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন জার্মানি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

লেখকের আরো কিছু পোস্ট