৭ই মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধুকে অবমাননাঃ

রাজাকার কন্যার দুঃসাহস ও ধৃষ্টতা অবাক করার মতগত ১৬ই জানুয়ারি আমি “৭ই মার্চের ভাষণের একজন গবেষক হিসাবে খালেদ ইয়াসমিনের তথ্য মেনে নিতে পারছি না।” শিরোনামে আমি ফেসবুকে একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম। লেখাটি আমি চুয়াডাঙ্গা জেলার সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদসহ ১২ জনকে ট্যাগ করেছিলাম। আজাদ ভাইকে ট্যাগ করার উদ্দেশ্য ছিল তাঁর জেলার একজন রাজাকার কন্যার ধৃষ্টতার বিষয়ে অবগত করা, এবং তিনি জেলার নেতা হিসাবে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন। আমি জেলার একজন প্রয়াত জাতীয় নেতার পুত্র ও মুক্তিযোদ্ধা জনাব মেসবাহ্-উল-হককেও ট্যাগ করেছিলাম। যে কোন কারণেই হোক আজাদ ভাইয়ের চোখ এড়িয়ে গেছে লেখাটি। মুক্তিযোদ্ধা জনাব মেসবাহ্-উল-হক সেখানে একটি মন্তব্য করেছেন। আমি এপর্যন্ত যত মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বলেছি তাঁরা প্রত্যেকে আমাকে জানিয়েছেন, “৭ই মার্চের ভাষণের পরই তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন। ২৬শে মার্চের ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করেননি কেউ।” সেক্ষেত্রে এই ভাষণের জাতীয় জীবনে কতটা গুরুত্ব সেটা বুঝতে কারো বাকি থাকার কথা না। মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ শক্তি উদ্দীপক মহৌষধ ছিল এই ভাষণ, এবং এই ভাষণটি ছিল অলিখিত। আর এই ভাষণ এখন সারা বিশ্বের অমূল্য সম্পদ যা সকল জাতীর মুক্তির সংগ্রামের অনুপ্রেরণা। কিন্তু ভাষণটি নিয়ে যখন কালিদাসপুর ইউনিয়নের একজন রাজাকার কন্যা অবমাননাকর মন্তব্য ও বিকৃত তথ্য প্রচার করে তখন আমি লিখেছি, সবার দৃষ্টি আকর্ষণে। খালেদা ইয়াসমিন পুটলি আমার লেখায় মন্তব্যে মারাত্মক অবমাননা করেছেন বঙ্গবন্ধুকে। আমি আমার নিবন্ধে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দিয়ে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে বলেছিলাম। কিন্তু এই রাজাকার কন্যা তা না করে মারাত্মক উদ্ধত্য দেখিয়ে মন্তব্য করলেন, “আপনি যেমন আমার পরম শ্রদ্ধেয় লতাফত (লথাফত নয়)স্যরকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন তার কোন সাক্ষ্য প্রমাণ দিতে পারবেন? আপনি যেমন উড়ো খবর শুনেছেন স্যার সম্পর্কে আমিও শুনেছি ৭মার্চের ভষনে জাসদ নেতাদের অনেক অবদান ছিল৷ সেখানে স্বাধীনতার কথা লেখা ছিল৷”আমি তার মন্তব্যের উত্তরে লিখলামঃ”আমরা যে বিষয়ে আছি সেখানে থাকি তাহলে ভালো হয়। নাহলে কেঁচো খুঁড়তে সাপ উঠে আসবে। আমি জনাব লতাফত রাজাকারকে নিয়ে ৪/৫ বছর বা তারও আগে লিখেছিলাম সে কথা আজ আসছে কেন? তখন জিজ্ঞাসা করতেন প্রমাণ দিয়ে দিতাম। আপনার শিক্ষিকা মালেকা হক, তিনিও নিশ্চয়ই আপনার শ্রদ্ধেয়া, তিনি এক সাক্ষাৎকারে আমাকে কি বলেছেন আপনার লতাফত স্যার সম্পর্কে জানতে চান? মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হান্নান কি বলেছেন তার রেকর্ডও আছে। ডাক্তার রওনক তুহিনের সাক্ষাৎকারের রেকর্ড আমার কাছে আছে।আমি তো কয়েকটি লেখায় আপনার ফুপাকে ধুয়ে দিয়েছি। সেটা আপনার গায়ে লাগেনি। এর অর্থ আপনি মেনে নিয়েছেন আপনার ফুপা রাজাকার ছিল। আর সে আপনার শ্রদ্ধেয় না। আমি কাজে আছি তাই আপনার মন্তব্যের বিস্তারিত জবাব এখন দিতে পারছি না। তবে আপনি ছাড়া কেউ লতাফত সাহেবের কুকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। আর আপনি ৪/৫ বছর পর প্রশ্ন করেছেন। এ থেকে প্রমাণ হয়ে গেল রাজাকারের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে শুধুমাত্র আপনি তার আদর্শ কিছুটা হলেও গ্রহণ করেছেন। এ দিয়েই প্রমাণ হল আপনি কোন বীজের আদর্শে আদর্শিত। আমি তো আপনার স্যার না আপনার পুরো পরিবারের কুকর্মের প্রমাণ দিয়ে দিতে পারবো। আপনার ফুপার কুকর্মের প্রত্যক্ষদর্শী একজন মেডিকেল কলেজের অধ্যাপিকার সাক্ষাৎকারের রেকর্ডও আমার হাতে আছে। যিনি আপনার স্যরেরও(জনাব লতাফত রাজাকার)ছাত্রী। আপনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যেখানে কথা হচ্ছে সেখানে থানা পর্যায়ের এক রাজাকারের প্রসঙ্গ টেনেছেন। বলিহারি আপনার শিক্ষা ও উদ্ধত্য। আমি কিন্তু আপনার বাবার অবস্থানও ভুলিনি মুক্তিযুদ্ধে। এরপর কথা বা মন্তব্য করতে হলে বিষয়ের বাইরে যাবেন না। তাতে পর্দা উঠে যাবে। আপনার ক্ষতি হবে, আমার কিছু হবে না।”আমার উত্তরের পর তিনি আর কিছু প্রকাশ্যে লেখেননি। তবে তিনি আমাকে প্রথমত আনফ্রেন্ড করেছেন এবং আবারও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছেন। আর ইনবক্সে উস্কানিমূলক কথা বার্তা লিখে আমাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাকে হতাশ করে আমি উত্তেজিত হয়নি। ইনবক্সে তিনি একজন ত্যাগী জাতীয় নেতাকে অবমাননা করেছেন। ইনবক্সের কাহিনী পরবর্তী পোষ্টে লিখবো।আমার মনে হচ্ছে জনাবা খালেদা ইয়াসমিন কোন তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন না করতে পেরে, সবার দৃষ্টি কৌশলে অন্যত্র সরিয়ে নিতে অপপ্রয়াস করেছেন। তিনি ভালো করেই জানেন যে, যা তিনি করেছেন তা ইতিহাস বিকৃতি এবং জাতির জনক, সংবিধান ও বিশ্ব সংস্থাকে অবমাননা করে। তিনি স্বাধীনতা বিরোধী না হলে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইতেন। কিন্তু তা না করে তিনি বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন জার্মানির সভাপতি জনাব মাহফুজ ফারুককে আক্রমণ করেছেন আমার পোষ্টে। সেখানে মাহফুজ ফারুক মন্তব্য করেছিলেন, “ইতিহাস বিকৃতকারীরা দেশের শত্রু। এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একজন বঙ্গবন্ধু গবেষক হিসেবে আপনার কর্ম এবং দায়িত্ব ও সচেতনতাবোধ আমাকে আপনার প্রতি শ্রদ্ধান্বিত করে তোলে। শুভ কামনা রইল।”এর উত্তরে খালেদা ইয়াসমিন লিখলেন, “Mahfuz Faroque ইতিহাস কখনো বিকৃত হয় না৷ ইতিহাস সত্যকে উৎঘাটন করে, মিথ্যা কে বর্জন করে৷ সময় কথা বলে৷ দয়া করে কাউকে ভয় দেখিবেন না ৷ ভয়ের সংস্কৃতি বর্জন করুন৷”জনাবা ইয়াসমিন আপনার এই ব্যাখ্যার সাথে একমত হতে পারলাম না। আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন সেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা অহরহ ইতিহাস বিকৃতির কথা বলছেন। তাঁরা কী ভুল বলছেন? ইতিহাস বিকৃতি হয় না এই ব্যাখ্যা রাজাকাররা দেয়, আপনার কথায় সেই সুরই বাজছে। রাজাকাররা ধর্ষণ করলে তো কোন পাপ হয় না। তা হয় ইসলাম রক্ষায়। আপনার প্রত্যেকটি কথায়, আপনি কোন মানসিকতার তা প্রমাণ করেছেন। আপনি যা করেছেন তা অবশ্যই ইতিহাস বিকৃতি এবং ডিজিটাল আইনে শাস্তিযোগ্য। যা মাহফুজ ফারুক বলেছেন তা ঠিক, সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবীও তাই মনে করেন। আমি আমার সভাপতিকে খুব ভাল করে জানি তিনি কাউকে ভয় দেখান না এবং কোন দুর্নীতির সাথেও থাকেন না। তাঁর(মাহফুজ ফারুক) সম্পর্কে জানতে চাইলে মাননীয় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। মাননীয় মন্ত্রীর সাথে আপনার নিশ্চয়ই জানাশোনা আছে কারণ আপনি আর.ই.বি-র তৃতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তী ছিলেন। আমি লেখার ক্ষেত্রে আগে তথ্য-প্রমাণ যোগাড় করি তারপর লিখি। খালেদ ইয়াসমিনকে আমি রাজাকার কন্যা বলেছি তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে। আলমডাঙ্গা থানার মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের কমান্ডার মোঃ আব্দুল হান্নান তাঁর লিখিত ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে বৃহত্তর কুষ্টিয়া’ গ্রন্থের ৩১৩ পৃষ্ঠায় আলমডাঙ্গা থানার রাজাকার আলবদরদের তালিকা দিয়েছেন। সেখানে কালিদাসপুর গ্রামের রাজাকার হিসাবে প্রথম ব্যক্তির নামাটাই তার বাবার। যদি তিনি ইশারত মিয়াকে তার বাবা হিসাবে অস্বীকার না করেন। আলমডাঙ্গা থানা পাড়ার প্রথম ব্যক্তি হিসাবে যার নাম উল্লেখ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা হান্নান তাঁর গ্রন্থে সে নামটি হল লতাফত হোসেন মাস্টার। এই মাস্টারের সাফাই কেউ গাইনি আজ পর্যন্ত আমার কোন লেখায় বা আমার সামনে, শুধুমাত্র খালেদ ইয়াসমিন ছাড়া। তাহলে এই মহিলা কত বড় রাজাকারের চামচা সেটা আপনারা অনুধাবন করতে পারেন।এছাড়াও অন্তত ৫০জন মুক্তিযোদ্ধা আমার সাথে সাক্ষাৎকারে ইশারত মিয়া ও লতাফত হোসেন মাস্টার রাজাকার সে কথা বলেছেন। আমি চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি করছি ব্যাপারটি খতিয়ে দেখার জন্য। এই রাজাকার কন্যার হঠাৎ জাসদ প্রীতির উদ্দেশ্য কী? কেনই বা তিনি প্রকাশ্যে রাজাকারের সাফাই গাইছেন, আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে আক্রমণ করছেন। কোন ধ্বংসাত্মক কাজের মাস্টার মাইন্ড হয়ে তিনি কোন অপকর্মে জড়িত কিনা খতিয়ে দেখা জরুরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

লেখকের আরো কিছু পোস্ট