জয় বাংলা আমাদের জাতীয় জীবনের একটি মৌলিক ও তাৎপর্যপূর্ণ অংশ। এরসাথে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, স্বাধীনতা ও মুক্তির চেতনা জড়িত। জয় বাংলা শব্দ যুগল শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে এবং দেশকে মুক্ত করতে বলবর্ধক টনিকের মত কাজ করেছ, এখনও করে। অতএব সাংবিধানিকভাবেই এই শব্দ যুগলের স্বীকৃতি পাওয়া উচিৎ। সাংবিধানিক স্বীকৃতি এই শব্দ যুগলকে আরও মর্যাদাবান করবে। আমার মনে হয় বিষয়টি সরকারের বিবেচনা করা উচিৎ। আর দল আওয়ামী লীগও বিষয়টি মাথায় রাখতে পারে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি পাকিস্তানি দালালেরা জয় বাংলা শব্দ গুচ্ছকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবন থেকে মুছে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সে সময় শুধুমাত্র আওয়ামী লীগই এই শব্দ-গুচ্ছকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। অতএব দল আওয়ামী লীগ এই শব্দ-গুচ্ছের সাংবিধানিক স্বীকৃতির প্রশ্নটি সরকারের সামনে দৃঢ়ভাবে উত্থাপন করতে পারে এবং তা উচিৎ। যদিও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তবুও সরকার আওয়ামী লীগ না। আওয়ামী লীগ মুক্তি ও স্বাধীনতার যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল। অতএব এই দলের নৈতিক দায়িত্বও অনেক বেশি।বাংলাদেশে প্রগতিশীল অনেক দল আছে তারা একুশের চেতনার কথা বলে, দেশের মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদানের গল্প শোনায়, কিন্তু পাকিস্তানের তল্পিবাহকের মত উর্দু ভাষায় বাংলাদেশ জিন্দাবাদ শ্লোগান দেয়। এমনকি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিও এর বাইরে না। তারা তাদেরকে প্রগতিশীল বলে দাবী করে কিন্তু দলীয় স্লোগানের ক্ষেত্রে প্রগতি তারা আনতে পারেনি এখনও ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের স্লোগানটিই দিয়ে চলেছে। তাদের জয় বাংলা স্লোগানে একটিই আপত্তি থাকতে পারে তা হল সকল কৃতিত্ব আওয়ামী লীগের ঘরে চলে যেতে পারে। কারণ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই শ্লোগানটি ধরে রেখেছে।গত ১লা নভেম্বর ২০১৮ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি জনাব মুজাহিদুল ইসলামের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের মার্চের ভাষণের উপর। সাক্ষাৎকারের শেষ পর্যায়ে তার অনুমতি নিয়ে একটা প্রশ্ন করেছিলাম, “কেন তার দল উর্দু ভাষায় বাংলাদেশ জিন্দাবাদ স্লোগান দেয়।” তিনি তখন এর কোনো সন্তোষজনক উত্তর না দিতে পেরে, আমাকে বলেছিলেন একটা ভাষায় স্লোগান দিলে কী যায় আসে শ্লোগানটি তো মুখ্য কোন ব্যাপার না। আমি তখন তাঁকে বলেছিলাম আমাদের ভুললে চলবে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের কথা। ভাষার জন্য আমরা আন্দোলন করেছি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে, সেখানে উর্দু ভাষায় শ্লোগান। তখন তিনি আমাকে আবেগতাড়িত করে বললেন, “বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের মার্চের ভাষণ নিয়ে কথা বলতে চেয়ে আমি তাঁর সাথে অন্য বিষয় নিয়ে বিতর্ক করছি। আমি তাঁকে অবশ্য বিনয়ের সাথে ক্ষমা চেয়ে বলেছিলাম, “আপনি আমার পরম শ্রদ্ধেয় আপনার অনুমতি নিয়েই প্রশ্নটি করেছি। বিতর্কের জন্য না বা আপনাকে হেয় করার জন্যও না। কারণ অনেক জামাতি, রাজাকার বা প্রতিক্রিয়াশীলদের কাছ থেকে আমাকে প্রশ্নটি শুনতে হয়েছে তাই।” তখন তিনি ব্যাপারটি বুঝেছিলেন। তারপর অবশ্য আরও ১০/১৫ মিনিট আলাপ দীর্ঘায়িত হয়েছিল।এসবের আলোকে সরকারের কাছে আমাদের দাবী থাকবে জয় বাংলাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হোক। সেইসাথে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে জয় বাংলার গুরুত্ব অনুধাবনে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হোক। তাতে বিভিন্ন বিতর্ক এড়িয়ে আমাদের আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও শিক্ষিত করে তোলা যাবে। (সমাপ্ত)মমতাজুল ফেরদৌস জোয়ার্দারতথ্য ও গবেষণা সম্পাদকঅল ইউরোপিয়ান বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন জার্মানি।
